নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ব্যাখ্যা কর। Aristatle on Citizenship

নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা - Aristatle on Citizenship

নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ব্যাখ্যা কর।
নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ব্যাখ্যা কর। Aristatle on Citizenship

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নউত্তর 

১। অ্যারিস্টটলের জন্ম কতসালে?

উত্তর। খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে।


২। পেরিপ্যাটেটিকস কাকে বলে? 

উত্তর। অ্যারিস্টটল তাঁর ছাত্রদের পায়চারি করতে করতে বক্তৃতা দিতেন এবং এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতেন এই শৈলীটিকে পেরিপ্যাটেটিকস বলা হয়।


৩। অ্যারিস্টটল কোন পদ্ধতিতে তাঁর মতামত আলোচনা করেছেন? 

উত্তর। যুক্তিবিজ্ঞানসুলভ বা আরোহী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। 


৪। অ্যারিস্টটলের মতে নাগরিকত্বের প্রধান শর্ত কি?

 উত্তর। বিচার বিভাগের কাজে ও সরকারী পদে স্থায়ীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারা।


৫। রাষ্ট্রবিজ্ঞান কেন “উদ্দেশ্যমূলক বিজ্ঞান’?

উঃ অতীত ও বর্তমানের একাধিক রাষ্ট্র ও পরস্পরের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে ভবিষ্যতের জন্য একটা আদর্শ রাষ্ট্র সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করা যায়। উত্তরসূরীদের জীবন সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এরূপ আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এই কারনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে উদ্দেশ্যমূলক বিজ্ঞান নামে পরিচিত।


৬। অ্যালান বলের মতে রাজনীতি আলোচনার মূল ধারণা কি?

উঃ অ্যালান বলের মতে রাজনীতি আলোচনার মূল ধারণা হল রাজনৈতিক ক্ষমতা বিরোধ এবং মীমাংসা।

৭। 'The Nature of Politics' গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উঃ জে.ডি.বি. মিলার হলেন 'The Nature of Politics' গ্রন্থের লেখক।


৮। মাকসবাদীদের মতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে? 

উঃ মার্কসীয় মতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল সেই বিষয় যা শ্রেণি দ্বন্দ্ব, শ্রেণি বৈরিতার সম্পর্কে সার্বিক আলোচনা করে এবং এগুলি সম্পর্কিত পরিচালক গোষ্ঠীর ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্তসমূহের ওপর আলোকপাত করে থাকে।  

প্রবন্ধমূলক প্রশ্নউত্তর

১। নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর। পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় বিশেষত প্রাচীন গ্রীক দর্শনে দিক্পা‌ল প্রাচীন মনস্বী হলেন অ্যারিস্টটল। বিজ্ঞান হিসেবে রাজনীতি তাঁর নিকট নৈতিকতার ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অ্যারিস্টটল বাস্তব রাজনৈতিক সম্পর্কের অভ্যন্তরীণ যুক্তিপরম্পরা ও সত্যকার অর্থ ব্যাখ্যায় গুরুত্ব আরোপ করেন।


প্রসঙ্গত দাসব্যবস্থা ভিত্তিক গ্রীক সমাজের নগররাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতির নিরেক্ষে অ্যারিস্টটলের বিভিন্ন বিষয়ক বক্তব্য তুলে ধরা অবশ্যম্ভাবী। নগররাষ্ট্রকেন্দ্রিক গ্রীসের এথেন্স, স্পার্টা, আক্রাগাস প্রভৃতি নগরগুলি যা বর্তমান শহর বা নগর এর আকৃতি প্রকৃতি থেকে ভিন্ন তবে প্রাচীন গ্রীসে নগর রাষ্ট্র বলতে উল্লিখিত গুলিই বোঝাত। এগুলি পোলিস নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানের মত জটিল না হলেও প্রাচীন গ্রীসের সামাজিক স্তর বিন্যাস ছিল। যা দাসব্যবস্থা ভিত্তিক সামাজিক স্তর বিন্যাস এবং অনেকটাই অনমনীয় ও অমানবিক সর্বোপরি অগনতান্ত্রিক।


অ্যারিস্টটল তাঁর ‘The Politics' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে হলে নাগরিকতার প্রকৃতি বুঝতে হবে। কারন রাষ্ট্র একটি নাগরিকমন্ডলী। তাঁর মতে নাগরিকতা বসবাস বা ব্যক্তিগত আইনের অধীন অধিকার দ্বারা নির্ধারিত হয় না, সরকারী আইনের অধীন সাংবাদিক অধিকার দ্বারা নির্ধারিত হয় না। “যে বিচার বিভাগের কার্যে এবং সরকারী পদে স্থায়ী ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই নাগরিক। তাঁর মতে কোন স্থানে বসবাস করলেই প্রকৃত নাগরিক হওয়া যায় না। বাসিন্দা বিদেশীরা এবং ক্রীতদাসরা একস্থানে বসবাস করে কিন্তু তারা নাগরিক নয়। তিনি আরো বলেন, আদালতে অভিযোগ করা এবং অভিযুক্ত হওয়া—এই পৌর অধিকার ভোগ করলেই নাগরিক নয়। অ্যারিস্টটলের মতে, যে বিতর্ক বা বিচার বিভাগীয় পদে অংশগ্রহণের অধিকার ভোগ করে (যে কোন সময়ের জন্য নির্ধারিত বা অনির্ধারিত) সেই তার রাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদা অর্জন করে। রাষ্ট্র এইরূপ ব্যক্তিদের সংগঠন যারা সংখ্যায় হবে স্বয়ং সম্পূর্ণ জীবন যাপনের যোগ্য। তিনি বলেন সংবিধানের পরিবর্তনের পরেও যারা বিচার ও বিতর্ক বিভাগীয় পদে আসীন থাকবে তারা কার্যত নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে। রাষ্ট্র উৎকৃষ্টতম হতে তিনি সুনাগরিকের কথা উল্লেখ করেন। নাগরিকের গুনবত্তা হবে সংবিধান সাপেক্ষ।


অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন ব্যাক্তি বা পরিবার নয় রাষ্ট্র আকারের দিক থেকে নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট একথা সমূহতা। তাঁর মতে, সেই নাগরিক যে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রটির বিধান উপদেশক ও বিচার ক্ষমতায় অংশ নিতে পারে। সকল ধরনের রাষ্ট্রই নাগরিক বলতে সেখানে যা বোঝায় তার অনুরূপ নাগরিক অধিকার সমূহে ভূষিত জনমন্ডলীকে বাছাই করার ভিত্তির অনুরূপ। নগররাষ্ট্রে দাসব্যবস্থাই ছিল অন্যতম ভিত্তি। তাঁর মতে কোন দাসের পরিণত ও স্বাধীন ব্যক্তিসুলভ প্রকৃতির বিকাশ ঘটলে তাকে মুক্ত করে স্বাধীন জীবনের অধিকার দেওয়া যেতে পারে। নাগরিকদের বৌদ্ধিক ও নৈতিক মান উন্নয়ন তাঁর নিকট ছিল জরুরী।


অ্যারিস্টটলের মতে, নাগরিকতার ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি হচ্ছে সংবিধান। সংবিধানগুলির মধ্যে গুনগত পার্থক্য থাকায় ভিন্ন ভিন্ন সংবিধানের অধীন নাগরিকও ভিন্ন ভিন্ন হবে।


অ্যারিস্টটলের ব্যাখ্যায় ব্যবহারিক জীবনে নাগরিক বলতে পিতামাতার সন্তান আবার তিনি দূর পশ্চাত বংশের দ্বিতীয়, তৃতীয় আরো অধিক পর্যায় পর্যন্ত টেনে নিয়েও নাগরিকত্বের আলোচনা করেছেন। তবে যারা কোন রাষ্ট্রের প্রথম নিবাসী বা প্রতিষ্ঠাতা তাদের ক্ষেত্রে নাগরিক পিতামাতার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।


অ্যারিস্টটল আদর্শ সংবিধানের জন্য সুনাগরিকের প্রয়োজন। সুনাগরিক নৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হবে। তাঁর মতে সুনাগরিকের মধ্যে শাসন করার ও শাসিত হওয়ার উপযুক্ত জ্ঞান ও যোগ্যতা থাকবে। স্বাধীন মানুষের উপর শাসন পরিচালনা করার জ্ঞান হিসাবেই নাগরিকের গুনবত্তাকে নিরুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়াও সুনাগরিকের থাকবে উপযুক্ত সংযম ও ন্যায়শীলতা স্বকীয় বিশেষ গুন। তিনি আরো বলেন যারা রাষ্ট্রের জীবনের অপরিহার্য অংশ তাদের সকলকে নাগরিক শ্রেণীভুক্ত করা যায় না। তেমনি যে অর্থে বয়স্করা নাগরিক সেই অর্থে শিশুরা নাগরিক নয়। বয়স্করা সম্পূর্ণ নাগরিক কিন্তু শিশুরা সীমিত অর্থে নাগরিক কারন তারা অপরিণত।


অ্যারিস্টটল আরো বলেন জনসংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধির নির্ভর করে নাগরিকতার যথাক্রমে প্রসার হ্রাস নীতির আইন সৃষ্টি হয়।


সর্বোপরি বলা যায় একাধিক নগর রাষ্ট্রের তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে প্রাচীন গ্রীসে বিভিন্ন সংকটাপন্ন নগর রাষ্ট্রের উদ্ভুত সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজনীয় নাগরিকের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা অ্যারিস্টটল ব্যাখ্যা করেন। যার বেশ কিছু ধারণা আজও আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে বা রাষ্ট্রের প্রতি জনগনের কর্তব্য পালনে একান্ত প্রয়োজন।


   কলমে - ড. বসুবন্ধু সেগুপ্ত

Post a Comment

0 Comments