ভারতীয় চিন্তাধারা চিন্তাবিদগণ ও বিষয়সমূহ রাষ্ট্র সম্পর্কে কৌটিল্যের ধারণা (Kautilya on State)
Kautilya on State |
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক:
প্রশ্ন ১। কৌটিল্যের লেখা একটি গ্রন্থের নাম লেখ।
উত্তর। অর্থশাস্ত্র।
প্রশ্ন। ২। "অর্থশাস্ত্র" কে কেন 'technical work on polity' বলা হয়।
উত্তর। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ভূমি দখল ও সংরক্ষণ বিষয়ক একটি সর্বাত্মক আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্র সম্পর্কিত আলোচনার বিজ্ঞানসম্মত রূপ প্রদান করেছেন তাই অর্থশাস্ত্রকে "technical work on polity বলা হয়।
প্রশ্ন ৩। দ্বৈত রাজ্য কাকে বলে?
উত্তর। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী দুজনের শাসন যে রাজতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত তাকে দ্বৈতরাজ্য বলা হয়।
প্রশ্ন ৪। কৌটিল্যের মতে বৈরাজ্য কি?
উত্তর। কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কোন কোন সময় আইন ভিত্তিক রাজাকে সরিয়ে শত্রু পক্ষ শাসন ক্ষমতা দখল করে শাসন কার্য পরিচালনা করে তাকে বৈরাজ্য বলা হয়।
প্রশ্ন ৫। কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রের উপাদানগুলি কি কি?
উত্তর। রাজা, মন্ত্রী, জনপদ, দূর্গ, কোষ, সেনাবাহিনী ও মিত্ররাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৬। কৌটিল্য রাষ্ট্রে উপাদান হিসেবে কয়প্রকার ও কি কি দুর্গের উল্লেখ করেছেন?
উত্তর। চারপ্রকার —
- (১) জলদুর্গ
- (২) পর্বত দূর্গ
- (৩) মরুভূমি দূর্গ
- (৪) জঙ্গলদূর্গ
প্রশ্ন ১। কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাষ্ট্রের উপাদানগুলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মাৎস্যন্যায় থেকে মানুষ নিজেকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতিষ্ঠা করতে ও অরাজগতার হাত থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে দেবতার স্মরণাপন্ন হন। মনু উৎপাদিত শস্যের ভাগ পাওয়ার শর্তে সরকারের দায়িত্ব নেন এবং সমাজকে শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে নিরাপত্তা দেওয়ার শর্তে আবদ্ধ হন। কৌটিল্যের বর্ণিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজা রাজ্য শাসন করবেন এবং রাষ্ট্র শান্তি ও নিরাপত্তার আধার হবে।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রের উপাদানগুলি হল : রাজা, মন্ত্রী, জনপদ, দূর্গ, কোষ, সেনাবাহিনী, মিত্ররাষ্ট্র। এই সকল বিষয়গুলির বিষদ আলোচনা তাঁর অর্থশাস্ত্রে পাওয়া যায়। কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাজা আসবেন উচ্চবর্গ বা অভিজাত পরিবার থেকে। তিনি হবেন প্রচুর সম্পদ, মেধা ও বুদ্ধি সম্পন্ন। তাঁর মতে রাজার মন্ত্রী হিসেবে যারা নিয়োজিত হবেন তাঁরাও উচ্চ ও অভিজাত বংশ জাত, শিল্পকল, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হবেন। মন্ত্রীরা কুশলী, বাগ্মী, নির্ভীক ও বুদ্ধিবান হবেন। মন্ত্রীদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনাও উপস্থিত।
কৌটিল্যের ব্যাখ্যায় রাষ্ট্র হবে কল্যাণকর। রাষ্ট্র তার নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে বসবাসকারী দুর্বল, অক্ষম ও সহায় সম্বলহীন ব্যক্তিদের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সকলের কল্যাণ ও বিকাশ সাধন করবে রাষ্ট্র। শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর প্রদান করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কোষের সমৃদ্ধির জন্য বা প্রয়োজনে তিনি কৃষকদের উপর বধিত কর চাপানোর কথা বলেন। এছাড়া ব্যবসায়ী উপর, পশুপালকদের কর বসানো পক্ষে মতামত জ্ঞাপন করেন। সুনির্মিত ও সুরক্ষিত দূর্গ ও দক্ষ সেনাবাহিনীর কথা বলেন কৌটিল্য বিশেষত বাইরের শত্রুর মোকাবিলার লক্ষ্যে ও সংকটে রাজা ও পরিবারবর্গের নিরাপত্তার লক্ষ্যে। কৌটিল্য দন্ডবাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে মূলত ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও সূদ্র এই তিন বর্ণের উপর গুরুত্ব দেন। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পর যথাযথ প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন কৌটিলা। যুদ্ধ বাহিনীতে রথ, অশ্ব, হস্তী ব্যবহারের কথা বলেন। তাঁর মতে আপদে-বিপদে যারা সাহায্য করবেন তাঁরাই মিত্র হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
প্রবন্ধমূলক উত্তরভিত্তিক:
প্রশ্ন ১। রাষ্ট্র সম্পর্কে কৌটিল্যের মতামত ব্যাখ্যা কর।
উত্তর। বেদ, বেদাঙ্গ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি শাস্ত্রসমূহ ভারতের বিদ্যা, সভ্যতা, দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। ভারতের রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি বুঝতে প্রাচীন ঐতিহ্য অনুধাবন আবিশ্যক। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তায় কৌটিল্য অন্যতম। কৌটিল্য তাঁর পূর্বের আলোচকদের রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়গুলি হয় খণ্ডন করেছেন নতুবা পূর্ণমূল্যায়ন করে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করেছেন। কৌটিল্যের লেখা অর্থশাস্ত্র থেকে তাঁর রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিস্তৃত আলোচনা পাওয়া যায়।
কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মাৎস্যন্যায় থেকে মানুষ নিজেকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতিষ্ঠা করতে ও অরাজগতার হাত থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে দেবতার স্মরণাপন্ন হন। মনু উৎপাদিত শস্যের ভাগ পাওয়ার শর্তে সরকারের দায়িত্ব নেন এবং সমাজকে শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে নিরাপত্তা দেওয়ার শর্তে আবদ্ধ হন। কৌটিল্যের বর্ণিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজা রাজ্য শাসন করবেন এবং রাষ্ট্র শান্তি ও নিরাপত্তার আধার হবে।
কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাষ্ট্রগঠনের পেছনে ভগবানের অবদান রয়েছে। তাঁর মতে রাজা শাসন করলেও নির্দেশ আসে ভগবানের নিকট থেকে। তাই রাজার নির্দেশ অমান্য করলে ভগবান তাকে শাস্তি দেবেন।
কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বলা যায় তিনি মাঝারি আকারের রাষ্ট্রের পক্ষপাতী ছিলেন। তবে আকার সংক্রান্ত তাঁর নির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও রাষ্ট্র কল্যাণকর সুশাসন ও শৃঙ্খলার উপর গুরুত্ব দেবে—এরূপ আলোচনা পাওয়া যায়। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে দ্বৈরাজ্য শাসনের ব্যাখ্যা পাওয়া। যায়। তাঁর মতে, যে রাজতন্ত্রে দুজনের শাসন বর্তমান তা দ্বৈতরাজ্য। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাজার কর্মসম্পাদনের কথা উল্লেখ করেন কৌটিল্য। তাঁর মতে রাজা মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মীদের নিয়োগ করবেন। রাজা রাজ্যের অভ্যন্তরে খবরাখবর সংগ্রহের জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করবেন। বাইরে থেকে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাবেন। ভিন্ন রাজ্য থেকে আসা রাজদূতদের গ্রহণ করবেন। বিদেশনীতি নির্ধারণ শত্রুরাষ্ট্রের বিপক্ষে সৈন্য মোতায়েন প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করবেন। তাঁর আলোচনায় রাজকোষের দায়িত্ব, বিশেষ কয়েকটি বিচার সংক্রান্ত কাজ, বিরোধীদের মীমাংসা প্রভৃতি বিষয়ক কাজের উল্লেখও পাওয়া যায়।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্রের উপাদানগুলি হল : রাজা, মন্ত্রী, জনপদ, দূর্গ, কোষ, সেনাবাহিনী, মিত্ররাষ্ট্র। এই সকল বিষয়গুলির বিষদ আলোচনা তাঁর অর্থশাস্ত্রে পাওয়া যায়। কৌটিল্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাজা আসবেন উচ্চবর্গ বা অভিজাত পরিবার থেকে। তিনি হবেন প্রচুর সম্পদ, মেধা ও বুদ্ধি সম্পন্ন। তাঁর মতে রাজার মন্ত্রী হিসেবে যারা নিয়োজিত হবেন তাঁরাও উচ্চ ও অভিজাত বংশ জাত, শিল্পকল, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হবেন। মন্ত্রীরা কুশলী, বাগ্মী, নির্ভীক ও বুদ্ধিবান হবেন। মন্ত্রীদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উপস্থিত। কৌটিল্যের ব্যাখ্যায় রাষ্ট্র হবে কল্যাণকর। রাষ্ট্র তার নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মধ্যে বসবাসকারী দুর্বল, অক্ষম ও সহায় সম্বলহীন ব্যক্তিদের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সকলের কল্যাণ ও বিকাশ সাধন করবে রাষ্ট্র। শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর প্রদান করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কোষের সমৃদ্ধির জন্য বা প্রয়োজনে তিনি কৃষকদের উপর বর্ধিত কর চাপানোর কথা বলেন। এছাড়া ব্যবসায়ী উপর, পশুপালকদের কর বসানো পক্ষে মতামত জ্ঞাপন করেন। সুনির্মিত ও সুরক্ষিত দূর্গ ও দক্ষ সেনাবাহিনীর কথা বলেন কৌটিল্য বিশেষত বাইরের শত্রুর মোকাবিলার লক্ষ্যে ও সংকটে রাজা ও পরিবারবর্গের নিরাপত্তার লক্ষ্যে। কৌটিল্য দন্ডবাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে মূলত ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও সূদ্র এই তিন বর্ণের, উপর গুরুত্ব দেন। সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পর যথাযথ প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন কৌটিল্য।
যুদ্ধ বাহিনীতে রথ, অশ্ব, হস্তী ব্যবহারের কথা বলেন। তাঁর মতে আপদে-বিপদে যারা সাহায্য করবেন তাঁরাই মিত্র হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
তাঁর মতে, রাষ্ট্রগুলির বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণে রাজা প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থার প্রধান হিসেবে সার্বিক উদ্যোগ ও কর্মসম্পাদনে বিশেষ ভূমিকা রাজার দ্বারা পালিত হবে। কৌটিল্য তাঁর অর্থ শাস্ত্রে রাষ্ট্রগুলির বিদেশনীতি গ্রহণে ছয়প্রকার পদ্ধতি প্রয়োগের উল্লেখ করেন।
যথা—শান্তি, যুদ্ধ, নিশ্চুপ, অগ্রসর হওয়া, আশ্রয় সন্ধান করা এবং দ্বৈতনীতি।
রাজার বিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা অনুযায়ী বিদেশনীতি গ্রহণ করবেন।
সর্বোপরি বলা যায়, কৌটিল্যের রাষ্ট্র সম্পর্কিত ব্যাখ্যার বিভিন্ন দিক বর্তমান দিনেও গ্রহণযোগ্যতা পরিলক্ষিত হয়, তবে তা বুদ্ধি থাকবে। জনপদ সম্পর্কে তাঁর মূলবক্তব্য হল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনপদের দ্বারা সারা দেশ সাহায্য প্রাপ্ত হবে। কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে চারপ্রকার দূর্গের আলোচন করেন।
যথা—
- জলদূর্গ
- পর্বত দূর্গ
- মরুভূমি দূর্গ
- জঙ্গল দূর্গ
কলমে - ড. বসুবন্ধু সেগুপ্ত
0 Comments
Thank you for contacting jibonta.in! Please let us know how we can help you.